ঢাকা বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
১৯ আশ্বিন ১৪৩০ বাংলা
শিরোনাম:
সিলেটে ৫ জনের কারাদন্ড মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড ও মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত , কালীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপের মুখো-মুখি সংঘর্ষ নিহত ১, পঞ্চগড়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমাবেশ- এর শুভ উদ্বোধন, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শিশু কার্ড এর চাউল আত্মসাতের অভিযোগ গাইবান্ধার মাসুদ মেম্বারের প্রতারনার শিকার স্ত্রী গোপালঞ্জের তাহমিনা আক্তার, জুড়ী ফুটবল ট্রেনিং একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া খুদে খেলোয়াড়েরাই একদিন দেশ-বিদেশে নাম ছড়িয়ে দেবে, গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের প্রচেষ্টা, উৎসবমুখর ও সুন্দর একটি দূর্গা পূজা নিশ্চিত করা, মধুপুরে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায়, অবরুদ্ধ ৬০টি পরিবার, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে টুঙ্গিপাড়া প্রেসক্লাব,

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি আইনী নয় ড. সুফি সামস্ সাগর মহাসচিব বিএইচপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০১:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৫৬ বার পড়া হয়েছে

সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি আইনী নয়, এটি বাঙালি জাতির উন্নত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন গঠনে বাংলা ভাষার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়!

মানুষের বিভিন্ন প্রকার ভাষা আছে। মুখের ভাষা, চোখের ভাষা, মনের ভাষা, শারীরিক ভাষা, ব্যক্ত ভাষা, অব্যক্ত ভাষা, বাংলা ভাষা, উর্দু ভাষা, ইংরেজী ভাষা ইত্যাদি। সবই মা ও মানুষের ভাষা। আদিমকালে হাততালি, বিভিন্ন শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি করার মধ্য দিয়ে মানুষ তাঁদের মনের ভাব বিনিময় করতো। এ থেকেই ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।

পাকিস্তানী শাসকরা কেন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তা বোধগম্য নয়। তারা কি উর্দু ভাষা শিক্ষা দিয়ে আমাদেরকে উর্দুভাষী সম্প্রদায়ভুক্ত করতে চেয়েছিল? রাষ্ট্রভাষা উর্দু করলেই রাতারাতি বাঙালিরা উর্দুভাষী হয়ে যেতো, এমনটা ভাবার কোনো কারণ ছিল না! মূলত: ভাষা সাম্প্রদায়িকতার অন্ধ উন্মাষিকতার উন্মাদনা থেকেই উর্দুভাষী পাকিস্তানী শাসকরা রাষ্ট্রভাষা উর্দু করে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল! যদি পাকিস্তানীদের মধ্যে মানবতাবাদী চেতনা বিদ্যমান থাকতো তাহলে তারা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার অদ্ভুত চিন্তা করতো না।

ইংরেজী ভাষা ইংরেজদের মাতৃভাষা। বিশ্বের সব ভাষাই মাতৃভাষা। এখানে ইংরেজী, বাংলা কিংবা উর্দু বলে কোনো কথা নেই। পৃথিবীতে উর্দুভাষী পাকিস্তানীদের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো জাতির উপর অন্যকোন ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

১৯৫২ সালে একমাত্র বাংলা ভাষার উপর উর্দুভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীতে কোনো জাতিকে তাঁদের মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়নি। একমাত্র বাংলাভাষী সম্প্রদায় মাতৃভাষা বাংলার জন্য বুকের তাজা রক্তে রাজপথ পিচ্ছিল করে দিয়েছিল। এ জন্যই সারা বিশ্বের মায়েরা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিজেদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ কারণেই বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করেছে।

আমরা আন্তর্জাতিক এই মাতৃভাষাকে বিশ্বব্যাপী বিকশিত না করে নিজেদের বগলতলা করে রাখতে চাই! এ ধরনের মানসিকতা থেকে আমরা অনেকেই অন্যান্য মাতৃভাষাকে অশ্রদ্ধা করি। আমরা যদি অন্য ভাষাকে অশ্রদ্ধা করি, তাহলে তারাও আমাদের ভাষাকে অশ্রদ্ধা করবে। এতে মানুষে-মানুষে বিভেদ-বিভক্তি পাকাপোক্ত হয়। অন্যান্য মাতৃভাষার দুএকটি শব্দ যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে সেটা বায়ূদূষণের মতো ক্ষতিকর বলে অনেকে আখ্যায়িত করেন। এক সময় আলেম সমাজ ইংরেজী ভাষা শিক্ষাকে না জায়েজ বলে ফাতওয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের তৈরি জীবনরক্ষাকারী ঔষধ সেবন করে নিজেদের জীবনরক্ষা করতে তারা লজ্জাবোধ করেননি। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের কবিতা ইংরেজী ভাষায় কাব্য করে নোবেল প্রাইজ লাভ করেছিলেন। তিনি ইংরেজী ভাষাকে কখনো অশ্রদ্ধা করেননি। ইংরেজী ভাষা ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের আন্দোলন হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে হাইকোর্ট অনেক আগেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য আদেশ জারি করেছেন। কিন্তু হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবে রূপ নেয়নি।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি সম্ভবত আইনী নয়। এটি বাঙালি জাতির উন্নত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন গঠনে বাংলা ভাষার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়। উন্নত জীবন গঠন করতে হলে উন্নত ও সম্মানজনক পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিচারিক, প্রশাসনিক, স্থাপত্ত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, এটমিক গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, সর্বাগ্রে সেটা দেখতে হবে। পেশাগত এসব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার চাহিদা এবং গুরুত্ব সৃষ্টি করতে হবে। যখন এসব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার চাহিদা ও গুরুত্ব সৃষ্টি হবে তখন আইনের প্রয়োজন হবে না, এমনিতেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে।

হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, অমর একুশে ফেব্রুয়ারী, বাংলা একাডেমী, এসব শব্দ বাংলা নয়, কিন্তু এসব শব্দ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মিশ্রন নেই, বিশ্বে এমন কোনো ভাষা প্রচলিত নেই। ভাষার মূল ক্রীয়া এবং প্রয়োজনীয়তা হলো, মানুষের মনের ভাব ও মত বিনিময় করা। এটা যে কোনো ভাষা এবং অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে হতে পারে, এতে দোষের কিছু নেই। বিশ্বের সকল ভাষাই মাতৃভাষা। ভাষার মধ্যে কোনো বিভিন্নতা নেই, সকল ভাষা এক ও অভিন্ন! বিভিন্নতা যা রয়েছে, তা হলো, বিভিন্ন ধরনের অক্ষর এবং বিভিন্ন শব্দ কিংবা বাক্য উচ্চারণ ও ব্যবহারে। কিন্তু ভাষা ও অক্ষরের মূল ক্রীয়া এক ও অভিন্ন।

যদি আমি নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় প্রদান করি তাহলে আমি বাঙালি সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে পড়ি। বাঙালি জাতিও একটি সম্প্রদায়। সম্প্রদায়ের অন্তরেই সাম্প্রদায়িকতা সুপ্তাবস্থায় গুপ্ত থাকে। সুপ্ত থাকা এ সাম্প্রদায়িকতা কখন যে ঘুমন্ত সাপের মতো জেগে ছোবল মারবে তা কেউ জানে না। কিন্তু আমি যদি নিজেকে বিশ্বমানব জাতির সদস্য বলে মনে করি এবং বিশ্ব মানবতাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী হই, তাহলে সম্প্রদায় কিংবা সাম্প্রদায়িকতা বলতে কিছু থাকে না। সাম্প্রদায়িকতা হলো, বিশ্বমানব জাতির জন্য অভিশপ্ত একটি ভয়ঙ্কর চেতনা। বিশ্বের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলো এই সাম্প্রদায়িকতার কারণেই ঘটেছে।

পবিত্র অমর একুশে ফেব্রুয়ারীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলা ভাষার জন্য যে সকল ভাই ও বোনেরা জীবন দিয়েছেন, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারীতে বিকশিত হোক বিশ্ব মানবতা, নির্মূল হোক অসভ্য সাম্প্রদায়িকতা, জাগ্রত হোক অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব মানবতাবাদী চেতনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি আইনী নয় ড. সুফি সামস্ সাগর মহাসচিব বিএইচপি

আপডেট সময় : ১২:০১:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি আইনী নয়, এটি বাঙালি জাতির উন্নত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন গঠনে বাংলা ভাষার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়!

মানুষের বিভিন্ন প্রকার ভাষা আছে। মুখের ভাষা, চোখের ভাষা, মনের ভাষা, শারীরিক ভাষা, ব্যক্ত ভাষা, অব্যক্ত ভাষা, বাংলা ভাষা, উর্দু ভাষা, ইংরেজী ভাষা ইত্যাদি। সবই মা ও মানুষের ভাষা। আদিমকালে হাততালি, বিভিন্ন শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি করার মধ্য দিয়ে মানুষ তাঁদের মনের ভাব বিনিময় করতো। এ থেকেই ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।

পাকিস্তানী শাসকরা কেন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তা বোধগম্য নয়। তারা কি উর্দু ভাষা শিক্ষা দিয়ে আমাদেরকে উর্দুভাষী সম্প্রদায়ভুক্ত করতে চেয়েছিল? রাষ্ট্রভাষা উর্দু করলেই রাতারাতি বাঙালিরা উর্দুভাষী হয়ে যেতো, এমনটা ভাবার কোনো কারণ ছিল না! মূলত: ভাষা সাম্প্রদায়িকতার অন্ধ উন্মাষিকতার উন্মাদনা থেকেই উর্দুভাষী পাকিস্তানী শাসকরা রাষ্ট্রভাষা উর্দু করে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল! যদি পাকিস্তানীদের মধ্যে মানবতাবাদী চেতনা বিদ্যমান থাকতো তাহলে তারা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার অদ্ভুত চিন্তা করতো না।

ইংরেজী ভাষা ইংরেজদের মাতৃভাষা। বিশ্বের সব ভাষাই মাতৃভাষা। এখানে ইংরেজী, বাংলা কিংবা উর্দু বলে কোনো কথা নেই। পৃথিবীতে উর্দুভাষী পাকিস্তানীদের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো জাতির উপর অন্যকোন ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

১৯৫২ সালে একমাত্র বাংলা ভাষার উপর উর্দুভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীতে কোনো জাতিকে তাঁদের মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়নি। একমাত্র বাংলাভাষী সম্প্রদায় মাতৃভাষা বাংলার জন্য বুকের তাজা রক্তে রাজপথ পিচ্ছিল করে দিয়েছিল। এ জন্যই সারা বিশ্বের মায়েরা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিজেদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ কারণেই বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করেছে।

আমরা আন্তর্জাতিক এই মাতৃভাষাকে বিশ্বব্যাপী বিকশিত না করে নিজেদের বগলতলা করে রাখতে চাই! এ ধরনের মানসিকতা থেকে আমরা অনেকেই অন্যান্য মাতৃভাষাকে অশ্রদ্ধা করি। আমরা যদি অন্য ভাষাকে অশ্রদ্ধা করি, তাহলে তারাও আমাদের ভাষাকে অশ্রদ্ধা করবে। এতে মানুষে-মানুষে বিভেদ-বিভক্তি পাকাপোক্ত হয়। অন্যান্য মাতৃভাষার দুএকটি শব্দ যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে সেটা বায়ূদূষণের মতো ক্ষতিকর বলে অনেকে আখ্যায়িত করেন। এক সময় আলেম সমাজ ইংরেজী ভাষা শিক্ষাকে না জায়েজ বলে ফাতওয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের তৈরি জীবনরক্ষাকারী ঔষধ সেবন করে নিজেদের জীবনরক্ষা করতে তারা লজ্জাবোধ করেননি। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের কবিতা ইংরেজী ভাষায় কাব্য করে নোবেল প্রাইজ লাভ করেছিলেন। তিনি ইংরেজী ভাষাকে কখনো অশ্রদ্ধা করেননি। ইংরেজী ভাষা ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের আন্দোলন হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে হাইকোর্ট অনেক আগেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য আদেশ জারি করেছেন। কিন্তু হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবে রূপ নেয়নি।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হওয়ার বিষয়টি সম্ভবত আইনী নয়। এটি বাঙালি জাতির উন্নত সুখী-সমৃদ্ধ জীবন গঠনে বাংলা ভাষার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়। উন্নত জীবন গঠন করতে হলে উন্নত ও সম্মানজনক পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিচারিক, প্রশাসনিক, স্থাপত্ত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, এটমিক গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, সর্বাগ্রে সেটা দেখতে হবে। পেশাগত এসব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার চাহিদা এবং গুরুত্ব সৃষ্টি করতে হবে। যখন এসব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার চাহিদা ও গুরুত্ব সৃষ্টি হবে তখন আইনের প্রয়োজন হবে না, এমনিতেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে।

হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, অমর একুশে ফেব্রুয়ারী, বাংলা একাডেমী, এসব শব্দ বাংলা নয়, কিন্তু এসব শব্দ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মিশ্রন নেই, বিশ্বে এমন কোনো ভাষা প্রচলিত নেই। ভাষার মূল ক্রীয়া এবং প্রয়োজনীয়তা হলো, মানুষের মনের ভাব ও মত বিনিময় করা। এটা যে কোনো ভাষা এবং অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে হতে পারে, এতে দোষের কিছু নেই। বিশ্বের সকল ভাষাই মাতৃভাষা। ভাষার মধ্যে কোনো বিভিন্নতা নেই, সকল ভাষা এক ও অভিন্ন! বিভিন্নতা যা রয়েছে, তা হলো, বিভিন্ন ধরনের অক্ষর এবং বিভিন্ন শব্দ কিংবা বাক্য উচ্চারণ ও ব্যবহারে। কিন্তু ভাষা ও অক্ষরের মূল ক্রীয়া এক ও অভিন্ন।

যদি আমি নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় প্রদান করি তাহলে আমি বাঙালি সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে পড়ি। বাঙালি জাতিও একটি সম্প্রদায়। সম্প্রদায়ের অন্তরেই সাম্প্রদায়িকতা সুপ্তাবস্থায় গুপ্ত থাকে। সুপ্ত থাকা এ সাম্প্রদায়িকতা কখন যে ঘুমন্ত সাপের মতো জেগে ছোবল মারবে তা কেউ জানে না। কিন্তু আমি যদি নিজেকে বিশ্বমানব জাতির সদস্য বলে মনে করি এবং বিশ্ব মানবতাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী হই, তাহলে সম্প্রদায় কিংবা সাম্প্রদায়িকতা বলতে কিছু থাকে না। সাম্প্রদায়িকতা হলো, বিশ্বমানব জাতির জন্য অভিশপ্ত একটি ভয়ঙ্কর চেতনা। বিশ্বের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলো এই সাম্প্রদায়িকতার কারণেই ঘটেছে।

পবিত্র অমর একুশে ফেব্রুয়ারীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলা ভাষার জন্য যে সকল ভাই ও বোনেরা জীবন দিয়েছেন, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারীতে বিকশিত হোক বিশ্ব মানবতা, নির্মূল হোক অসভ্য সাম্প্রদায়িকতা, জাগ্রত হোক অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব মানবতাবাদী চেতনা।