সোমবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩

শ্রীমঙ্গলে ৮ ঘণ্টার মধ্যে বাগান শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন,হত্যাকারী আটক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি,

আপডেট:

মোঃ জাকির হোসেন স্টাফ রিপোর্টের

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ায় লেবু বাগানের চাম্পালাল মুন্ডা হত্যাকাণ্ডের ০৮ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বিশ্বনাথ তাঁতীকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

গতকাল (১৪ মে) মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন পাত্রখলা চা বাগানের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সাঁড়াসি অভিযান পরিচালনা করে বিশ্বনাথ তাঁতীকে গ্রেফতার করা হয়।

বাগান মালিক পক্ষ জানায়, ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডা (৩৭) প্রায় ২/৩ বছর যাবৎ ডলুছড়ায় জনৈক দেববর্মার লেবু বাগানে কাজ করে আসছে। ঘাতক বিশ্বনাথ তাঁতীও ২ মাস যাবত এই বাগানে কাজ করে আসছিল।

বিজ্ঞাপন

ভিকটিম চাম্পা লাল মুন্ডা প্রতিদিন ভোর বেলা বাগানের লেবু বিক্রির জন্য ঠেলাগাড়ি করে শ্রীমঙ্গলে বাজারে নিয়ে যেত। গত ১৪/০৫/২০২৩ইং তারিখ ভোর বেলা ভিকটিম চাম্পালাল মুন্ডা বাজারে না আসার কারনে জনৈক জয় কুমার দেববর্মা চাম্পালাল মুন্ডার মোবাইলে ফোন দেয়। ভিকটিম চাম্পালাল মুন্ডা ফোন রিসিভ না করার কারণে লেবু বাগান মালিক জনক দেববর্মাসহ তার লোকজন বাগানের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে ১৪ মে সকাল অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকার সময় লেবু বাগানের ভিতরে মাটির রাস্তায় গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় চাম্পালাল মুন্ডাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাৎক্ষনিক লেবু বাগান মালিক জনক দেববর্মাসহ তার লোকজন চাম্পালাল মুন্ডাকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার পূর্বক চিকিৎসার জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪/০৫/২০২৩খ্রিঃ তারিখ ০৮.১০ঘটিকার সময় চাম্পালাল মুন্ডা মৃত্যুবরণ করে।

এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে মাননীয় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া মহোদয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব সুদর্শন কুমার রায় ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ( শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহিদুল হক মুন্সী এবং অফিসার ইনচার্জ, শ্রীমঙ্গল থানার সার্বিক দিক-নির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই/রাকিবুল হাছান, এসআই/মোঃ রফিকুল ইসলাম, এসআই/তীথংকর দাস এবং এসআই/মোঃ জিয়াউর রহমানসহ একটি চৌকস দল রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে।

শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মৃত দেহ ময়না তদন্তের নিমিত্তে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

ঘটনার দিনই পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে চৌকস দলটি ডলুছড়া লেবুর বাগানে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য যান।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বাগানের আরেক শ্রমিক বিশ্বনাথ তাঁতীকে লেবু বাগানে পাওয়া না যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে বিশ্বনাথ তাঁতীর বসত বাড়ীতে গেলে তার উঠানের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের দাগ এবং তার বসত বাড়ীর সামনের রাস্তায়ও রক্তের দাগ দেখতে পায় পুলিশ । পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কমলগঞ্জ থানাধীন পাত্রখলা চা বাগানের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সাঁড়াসি অভিযান চালিয়ে বিশ্বনাথ তাঁতীকে থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানান যে, গত ১৩/০৫/২০২৩ইং তারিখ রাত অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম চাম্পালাল মুন্ডাকে বসত ঘরে তার স্ত্রীর পাশে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে সে রাগান্বিত হয়ে লাঠি দিয়ে চাম্পালাল মুন্ডার কপালে ও পিঠে একাধিক আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে চাম্পালাল মুন্ডা গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় লেবু বাগানের ভিতরের মাটির রাস্তায় পড়ে থাকে। ঘটনার পর বিশ্বনাথ তাঁতী তাহার বাক-প্রতিবন্ধী স্ত্রী কে ঘরে রেখে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীর নিকট থেকে ভিকটিম চাম্পালাল মুন্ডার ব্যবহৃত আইটেল মোবাইল উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, ঘাতক ভিকটিম বিশ্বনাথ তাঁতীর বাক বাক-প্রতিবন্ধী স্ত্রীর সাথে ভিকটিমের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ১৩ তারিখ রাতে বিশ্বনাথ তাঁতী তার বসতঘরে ভিকটিম চাম্পালালকে নিজের স্ত্রীর সাথে শুয়ে থাকতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে ভিকটিম মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যায়।

(১৫ মে) গ্রেফতারকৃত বিশ্বনাথ তাঁতীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত