
- আপডেট সময় : ০৩:৪৩:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩ ৪ বার পড়া হয়েছে

ঘাটাইলে সাব-রেজিস্টার অফিসে সেবার নামে দুর্নীতি, এবং হয়রানির অভিযোগ,
মোঃ মশিউর রহমানঃ
ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও একটি উনয়নশীল দেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, গোটা সমাজই আজ দুর্নীতি নামক ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি। গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজের একজন সাধারণ নাগরিকের মুখে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ ও উদাহরণ শোনা যায়। দুর্নীতি অবশ্য অতিতেও ছিলো। প্রাচীন ভারতে দুর্নীতির এক চিত্র তুলে ধরেছেন উপেন্দ্র ঠাকুর। তিনি বলেছেন, আমরা পছন্দ করি আর নাই করি দুর্নীতি ছিলো, আছে এবং থাকবে। এটি মানব সমাজের মতই প্রাচীন এক সামাজিক সমস্যা। তবে সময়ের ব্যবধানে দুর্নীতির ধরন প্রকৃতিতে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি দুর্নীতি এখন ব্যাপকভাবে সমাজদেহে ছড়িয়ে পড়েছে। বস্তুতঃ বাংলাদেশে দুর্নীতি এক অন্যতম প্রধান সামাজিক ব্যাধি হিসেবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমাদের সমাজে দুর্নীতি এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, অনিয়মই যেনো নিয়ম, দুর্নীতি যেনো নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থসামাজিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে দুর্নীতি এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দুর্নীতি যেনো অনেকের জীবন প্রণালীর অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ফরম নং ১৫০৪। ধারা ৫২ (১) (খ) অনুসারে রসিদ। দ্রষ্টব্যঃ বিধি ৭, ২৪ (২) ৪৪ (২) এবং ৯৫ (২)। ধারা ৫২ উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন রসিদ। দাখিলকারীর অংশে বলা আছে, দাখিলকারী কর্তৃক ফেরত দেওয়া হইলে ইহা এই অংশে লাগাইয়া রাখিতে হইবে। টাংগাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কথিত দলিল লেখক সমিতির নামে নীরব চাঁদাবাজি যেনো থামছেই না। এতে প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে দলিল গ্রহিতারা। অফিস সহকারি রোকেয়া বেগম যোগদান করার পর থেকেই কথিত দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজির এ সিন্ডিকেটটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলিল লেখকদের একটি সূত্র সাংবাদিকদের বলেন, একটি দলিল সম্পাদনের পূর্বে ভেল্যুয়েশন অনুযায়ী সমিতিকে দিতে হয় ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সমিতি নির্ধারিত টাকা জমা দিলে সরকারি নোটিশে সমিতির একটি সাংকেতিক সিল দেয়া হয়। এই সিল না থাকলে কেরানি রোকেয়া বেগম কোনো দলিল জমা নেন না। এছাড়া, আমমোক্তার নামা দলিলে স্বচ্ছ কাগজপত্র থাকলেও তিনি অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে রোকেয়া বেগম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঘাটাইলের লক্ষীন্দর মৌজার আবু সাইদের কাছ থেকে শহিদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৬০ শতাংশ জমি কিনেন (দলিল নং-৬৪২৯, তারিখঃ ১/০৮/২২)। তার দলিল করতে কত খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব খরচ বাবদ আমি লেখক ভেন্ডারকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তথ্য সূত্রে জানা যায়, মৌজা অনুযায়ী ওই দলিলে ব্যাংক চালান বাবদ লাগে মাত্র ৮৬ হাজার ৮৬৯ টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩১ টাকা। একটি দলিলেই সিন্ডিকেটটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে দলিল গ্রহিতাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। অথচ, প্রশাসন একদম নীরব। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে নীরব চাঁদাবাজির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্টার মোঃ নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি থাকি ভিতরে। বাইরে কি হয় নাহয় তা আমি জানি না। তাছাড়া দলিল গ্রহিতারা যদি সচেতন না হয় তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্টার মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, আমিও শুনেছি, কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনাই। নতুন সাব-রেজিস্টার উনি এসেছেন। আমি উনাকে বলে দিয়েছি মানুষ এভাবে ভোগান্তিতে আছে। এমনকি এরকম চলতে থাকলে আইনত ব্যবস্থাও নিবেন বলে জানান তিনি।এখন সংক্ষিপ্তাকারে যে রসিদের কথা ব্যক্ত করবো সেই রসিদের ক্রমিক নং- ৬২৯৬। দলিল নং- ৬২৭৬। যাহার দ্বারা দলিলটি সম্পাদিত তাঁহার নামঃ মোঃ আব্দুর রহিম। এবং তাঁহার বরাবরেই সম্পাদিত হয়েছে। দলিলে লিখিত সম্পত্তির মূলে রয়েছেন, মোছাঃ তানিয়া জান্নাত। ফিস, হেবা দলিল পত্রে উল্লেখ আছে ১৪৮৪০০০ টাকা মাত্র। উদাহরণ স্বরুপ, হেবা দলিলে (সংক্ষেপে) ব্যাংক চালানঃ নেওয়ার কথা ৯০০টাকা ও নিচ্ছে ৯০০টাকা, স্ট্যাম্প ও কাউন্টারঃ নেওয়ার কথা ১০০০টাকা ও নিচ্ছে ১০০০টাকা, রাইটার সম্মানিঃ নেওয়ার কথা ১০০০টাকা ও নিচ্ছে ১০০০টাকা, রাইটার সমিতিঃ নেওয়ার কথা ৫০০টাকা ও নিচ্ছে ৪০০০-৬০০০টাকা, এন ফিসঃ নেওয়ার কথা ৩৬০টাকা ও নিচ্ছে ৭০০টাকা, ঘুষ মহিলার হাতে*৬০০০-৮০০০টাকা, সব মিলিয়ে ১৪৬০০-১৮৬০০টাকা। সাব-রেজিস্টার সিলের নিচে তারিখ দেওয়া আছে ১৭/০৭/২৩। রসিদের নিচের অংশে লেখা আছে, এই রসিদটি দাখিল করিলে দলিল ফেরত দেওয়া হইবে। উইল ব্যতিত অন্যান্য দলিল নিবন্ধন কার্যালয়ে দুই বৎসরের অধিককাল দাবিবিহীন অবস্থায় থাকিলে তাহা আইন অনুযায়ী বিনষ্ট করা যাইতে পারে। নিবন্ধন কার্য সম্পূর্ণ হইবার পর এক মাসের অধিক কাল কোনো দলিল বা পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দাবিবিহীন অবস্থায় থাকিলে প্রতিমাস বা তাঁহার কোনো অংশের জন্য অতিরিক্ত ৫ টাকা হারে ফি প্রদান করিতে হইবে। প্রতি ক্ষেত্রে এই ফি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা হইতে পারে। এমতাবস্থায় ঘাটাইল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্টার মোঃ নাজমুল হাসান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি এ পত্রিকাকে একটা মিনিটও সময় দিবে না বা কোনো কথা বলবেনা বলে জানান। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন তাঁর অফিসে গিয়েও তাঁর সহিত কোনো বিষয়ে জানতে চাওয়া অসম্ভব। সাব-রেজিস্টার মোঃ নাজমুল হাসান সাহেবের কক্ষে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে