শনিবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

বাংলাদেশের একমাত্র নারী চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি বিনতা ভূমিজের কাজ বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ,

আপডেট:

মোঃ জাকির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রেহানা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নির্বাচিত সভাপতি (বাগান পঞ্চায়েত কমিটি) বিনতা ভূমিজ বাগানের শ্রমিকদের বাসস্থান সমস্যা নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একমত না হওয়ায় দেশের সব চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটিগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী সভাপতি বিনতা ভূমজের কাজ বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিনতা ভূমিজ বলেন, রেহেনা চা বাগানের একজন স্থায়ী শ্রমিক ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং- বি-৭৭ এর প্রাথমিক স্তরের সরাদেশের চা বাগানসমূহের একমাত্র নারী পঞ্চায়েত সভাপতি হই। গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের ঘরবাড়ির সমস্যা বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলি। একপর্যায়ে ম্যানেজার এ বিষয়ে কথা বলতে আমাকে নিষেধ করে। আমি তাকে শ্রমিকদের বাড়িঘরের সমস্যাগুলো বিবেচনার অনুরোধ করলে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন তোমার শ্রমিক পদ না থাকলে তুমি সভাপতি থাকবে কি করে আমি দেখব। এরপর তিনি একটা চিঠি দিয়ে আমার কাজ বন্ধ করে দেন।

তিনি আরও বলেন, ম্যানেজারের এই সিদ্ধান্ত ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং একই সঙ্গে এই আদেশ বেআইনি এবং শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা ও নারী নেতৃত্ব বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। কাজ ফিরে পাওয়া এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে বিচার চাইব

বিজ্ঞাপন

লংলা ভ্যালীর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী বলেন, রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষের এমন বেআইনি আদেশের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। অবিলম্বে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে ও চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিনতা ভূমিজকে তার কাজ ফিরিয়ে দেওয়া এবং রেহানা চা বাগানে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী বলেন, চা বাগান শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রাথমিক স্তর হচ্ছে বাগান পঞ্চায়েত। দেশে একমাত্র নারী পঞ্চায়েত প্রধান তার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে এমন আচরণে চা শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের মতো কর্মসূচি হতে পারে। বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সমাধান করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, বিনতা ভূমিজ ৩ অক্টোবর বিকেলে শ্রম দপ্তর শ্রম ও কর্মসংস্থান বিভাগীয় কার্যলয়ের উপ-পরিচালক বরাবরে আবেদন করেছেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম দপ্তর দ্রুত সময়ে কোনো সমাধান না করলে চা শ্রমিক ইউনয়ন পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বিনতা ভূমিজের আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়নের তিনটি টায়ারের মধ্যে একটি হচ্ছে পঞ্চায়েত প্রধান। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, ভ্যালী প্রধান ও পঞ্চায়েতদের জন্য একটি সুরক্ষা আইন রয়েছে। আমরা এই সুরক্ষা আইন ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা তা দেখতে বাগান কর্তৃপক্ষেকে তলব করব এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই করে এর সুষ্ঠু প্রতিকার করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত