শনিবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

হস্ত কুটিশিল্প মেলা নামে উচ্চ শব্দে নাচ গান বাজনায় অতিষ্ট জনসাধারণ ,

আপডেট:

নিজিস্ব প্রতিবেদকঃখাদেমুল ইসলাম-

 

বিজ্ঞাপন

পঞ্চগড় জেলায় তেতুলিয়ায় উপজেলার
তেতুলিয়ায় হস্ত কুটিশিল্প মেলা নামে
উচ্চ শব্দে নাচ গান বাজনায় অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। জনসাধারণ দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি পড়েছে।

সংঘবদ্ধচক্রটি কতিপয় ২/১ জন সাংবাদিকসহ
বিভিন্ন বিশেষ মহলকে ম্যানেজ করে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডের মাধ্যমে বিভিন্ন অংকের প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করে মেলার অন্যতম আয়ের খাত সৃষ্টি করে এসব
করে আসছে।এব্যাপারে-দেখার বলার কেউ নেই।গত বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকালে
তেতুলিয়া হিলিপ্যাড মাঠে ফিতা কেটে এ মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আমিরুল ইসলাম।তেতুলিয়ায় হস্ত কুটি শিল্প পন্য
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু,
তেতুলিয়ায় উপজেলার ইউনিয়নের গ্রাম, পাড়া মহল্লায় রাতের বেলার উচ্চ শব্দে মাইক এবং ডিজে নাচ গান বাজনার কারনে মানুষের বিরক্তি ও যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে। দিন দিন শব্দ দূষন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন বিয়ে, জন্মদিন সহ যে কোন অকশনে রাতে উচ্চ শব্দে এলাকা কাঁপিয়ে গান বাজানো নতুন একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ফলে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ, হৃদরোগে যারা আক্রান্ত তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।গভীর রাত পর্যন্ত গান বাজানো রীতিমতো একটা অত্যাচারে পরিনত হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ঘটে মারধরের ঘটনা। অথচ শব্দ দূষন প্রতিরোধে রয়েছে আইন, আছে কর্তৃপক্ষ। তবে নেই নজর দারীতা ও আইনের প্রয়োগ। সম্প্রতি শব্দ দূষনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেন
উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের যুগ্ন আহব্বায়ক আনোয়ার হোসেন
। তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে রাতে উচ্চ শব্দে ডিজে গান বাজিয়ে শব্দ দূষনের পাশাপাশি যুব সমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে পরছে। গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে তারা পদ্যপানে লিপ্ত থাকে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এছাড়া রাতে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ফলে শিক্ষার্থী সহ বয়স্কদের অনেক সমস্যা হয়। পাশাপাশি শব্দ দূষনে পরিবেশের মারাত্মকভাবে ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে বিষয়টি অক্টোবর
তেতুলিয়ায় উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচিত হয়। ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, তেতুলিয়ায় কোথাও রাত নয়টার পর উচ্চ শব্দে গান বাজালে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা যায়, শব্দ দূষন প্রতিরোধে ২০০৬ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে শব্দ দূষন বিধিমালা প্রনয়ণ করা হলেও সেটা রয়েছে শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ। বিধি অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে হর্ন বাজানো নিষেধের বিধান থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই। বিধিমালায় স্পষ্ট লেখা আছে, বিবাহ বা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোন ধরনের সভা, বিভিন্ন ধরনের মেলা, যাত্রাগান ও হাট বাজারের বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হলে সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘন্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনভাবেই শব্দ দূষনকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে মসজিদ,গীর্জা,মন্দির,বা অন্য কোন ধর্মীয় উপাসনালয়, ঈদের জামাত, ওয়াজ মাহফিল,শব যাত্রা, জানাজা সহ সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারকালে, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনকালে এই বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া এই আইন অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে সাজার বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়। অনুমতি ছাড়া শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে ১ম অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এত আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা না থাকায় পঞ্চগড় জেলা তেতুলিয়ায়
বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিরাতেই বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ শব্দে বাজানো হচ্ছে লাউড স্পিকার। এসব উচ্চ শব্দের কারনে মানুষ বিরক্ত হলেও কিছুই বলতে পারে না। প্রতিবাদ করার কারনে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষনের ফলে শ্রবন শক্তি কমা ছাড়াও মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই উদাসীনতা না হয়ে এ দূষন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এক তথ্যের মাধ্যমে জানা যায়, বিদ্যমান শব্দ দূষন শিশুদের স্বাস্থ্য ও মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ দূষনে কানে কম শোনা, স্থায়ী মাথাব্যথা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষুধামন্দা, নিদ্রাহীনতা সহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশু যদি খুব কাছ থেকে ৩০ মিনিট ধরে ১০০ ডেসিবেল শব্দ শোনে তাহলে সে শিশুটি চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। শব্দ দূষন রোধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর হিয়ারং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ‘ ১৯৯৬ সাল থেকে শব্দ সচেতনতা দিবস পালন করে আসছে। এবং বাংলাদেশ বেসরকারিভাবে দিবসটি পালন শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে।শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দু-এক বছর পরপর প্রচারনা চলে। কিন্তু কয়েকদিন চলার পরে সব ঝিমিয়ে পড়ে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শব্দ দূষন দিন দিন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ভ্রাম্যমান আদালত আইনে শব্দ দূষন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অন্তর্ভুক্ত করা, হর্ন বন্ধে অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি করার উদ্যেগ নেওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শব্দ দূষনের কারন ও ক্ষতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত