শনিবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৩

দেবীগঞ্জ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন

বিগত ৬-৭ দিন যাবৎ হঠাৎ ভিকটিম চিন্তা ঋষিকে বাড়ীতে ও আশপাশে খুঁজে না পাওয়ায় ভিকটিমের নাতি জীবন ২২ ও সৎ ছেলে নেপাল ঋষি ৩৮

আপডেট:

দেবীগঞ্জ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন, আলামত উদ্ধার ও মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার  পঞ্চগড় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ক নক কুমার দাস তার অফিস কক্ষে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ কর্তৃক হত্যাকান্ডের ৮ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনার রহস্য উন্মোচন, আলামত উদ্ধার ও মূল আসামী গ্রেফতার সম্পর্কে প্রেস ব্রফিং করেন।গত সোমবার ০৬ -১১-২০২৩ খ্রিঃ তারিখ
ভিকটিম চিন্তা ঋষি ৬৬, স্বামী-মৃত ধরনী ঋষি, গ্রাম-মধ্যপাড়া, ২নং ওয়ার্ড, দেবীগঞ্জ পৌরসভা, থানা-দেবীগঞ্জ, জেলা-পঞ্চগড় পেশায় একজন ভিক্ষুক। ভিকটিম ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে ও ঘটনাস্থলের পার্শ্বে দক্ষিণ ভিটার উত্তর দুয়ারী চৌচালা টিনের তৈরী বেড়ার বসতঘরে বসবাস করতেন।

বিগত ৬-৭ দিন যাবৎ হঠাৎ ভিকটিম চিন্তা ঋষিকে বাড়ীতে ও আশপাশে খুঁজে না পাওয়ায় ভিকটিমের নাতি জীবন ২২ ও সৎ ছেলে নেপাল ঋষি ৩৮ ,গত ০৬-১১-২০২৩খ্রিঃ তারিখ, সময় দুপুর অনুমান ১২.০০ ঘটিকায় ভিকটিমের বাড়ীতে এসে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ভিকটিমের বসতবাড়ীর টিউবওয়েল ও চুলার মাঝামাঝি পরিত্যাক্ত রিং স্লাবের মাটি আলগা এবং তথা হতে দূর্গন্ধ পেয়ে আশপাশের লোকজনদের ডাকাডাকি করে বাড়ীতে আনেন। একপর্যায়ে দেবীগঞ্জের সম্মানিত পৌর মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অনেক লোকজন ঘটনাস্থলে এসে রিং স্লাবের নিকট দুর্গন্ধের উৎপত্তির বিষয়ে কোন কুল কিনারা না পেয়ে থানা পুলিশকে সংবাদ দেন।

তাৎক্ষণিক মোছাঃ রুনা লায়লা, সহকারী পুলিশ সুপার, দেবীগঞ্জ সার্কেল, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়, অফিসার ইনচার্জ ও ইন্সপেক্টর তদন্ত সাহেব ও অফিসার ফোর্স ঘটনাস্থলে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে উপস্থিত সকলের সম্মুখে লাশবহনকারী জনৈক মোঃ রেজাউল ইসলাম এর মাধ্যমে ভিকটিমের বসতবাড়ীর রিং স্লাবের ভিতরে থাকা মাটি খুঁড়ে ভিকটিম চিন্তা ঋষির অর্ধ গলিত শরীর ও মাথা নিচ অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভিকটিমের লাশ উপরে তোলেন।

বিজ্ঞাপন

 

ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে জানা যায়, ভিকটিম চিন্তা ঋষির গলাকাটা, বুকের মাঝখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত , পেটের ডান পার্শ্বে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। জনাব মোছাঃ রুনা লায়লা, সহকারী পুলিশ সুপার, দেবীগঞ্জ সার্কেল, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়, অফিসার ইনচার্জ ও ইন্সপেক্টর তদন্ত সাহেব তাৎক্ষণিক তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঘটনা সংক্রান্তে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভিকটিমের পরিবারের মোট-০৫ জন সদস্যকে থানা হেফাজতে নেন।

 

বিজ্ঞাপন

ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের নিমিত্ত জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ পঞ্চগড় কে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করে দেবীগঞ্জ থানায় প্রেরণ করি। তিনি এই ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামী সনাক্তের লক্ষ্যে সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম, অফিসার ইনচার্জ, দেবীগঞ্জ থানা, পঞ্চগড়, রঞ্জু আহম্মেদ, ইন্সপেক্টর তদন্ত দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় এবং দেবীগঞ্জ থানার চৌকস অফিসার এসআই নিরস্ত্র এ.কে.এম মঈন উদ্দিন, এসআই নিরস্ত্রমোঃ ইয়াকুব আলী, এসআই নিরস্ত্র মোঃ শহিদুল ইসলাম, এসআই নিরস্ত্র মোঃ সোহেল রানা-ফোর্সের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামী সনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

 

কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ পঞ্চগড় মোছাঃ রুনা লায়লা, সহকারী পুলিশ সুপার, দেবীগঞ্জ সার্কেল, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় এর উপস্হিতিতে পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন কৌশল ও সূত্র অবলম্বন করে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্যাদি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যাচাই বাছাই করা হয়। পাশাপাশি তাদের দেওয়া তথ্যসমূহ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে ভিকটিম চিন্তা ঋষি কে খুন করে লাশ গুমের ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আটককৃত ব্যক্তিগণের মধ্য হতে ০১ জন ব্যক্তি যার নাম মুকুল চন্দ্র রায় ৩৬ পিতা-মৃত খগেশ্বর, সাং-বালাগ্রাম চন্ডীহাটি, থানা-জলঢাকা, জেলা-নীলফামারী মৃতার জামাই এই হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিকটিমকে খুন করার বিষয়টি উদঘাটন করা সম্ভব হয়।

 

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী মুকুল চন্দ্র রায় এর সাথে ভিকটিম চিন্তা ঋষি এর মেয়ে রেনু ঋষির প্রায় ৬/৭ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। বিবাহের পর কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে ঘর সংসার করার একপর্যায়ে রেনু ঋষি জানতে পারেন যে, মুকুল চন্দ্র রায়ের পূর্বের আরেকজন স্ত্রী আছে। বিষয়টি জানতে পেরে রেনু ঋষি তার স্বামী মুকুল চন্দ্র রায়কে তালাক প্রদান করে তার মায়ের সাথে বসবাস শুরু করেন। তালাক প্রদান করলেও ঘটনার কিছুদিন পর হতে মুকুল চন্দ্র রায় এবং রেনু ঋষি স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় থাকত। এরই একপর্যায়ে রেনু ঋষি গাজীপুর এলাকায় কাজের জন্য যায় এবং সেখানে আল আমিন নামের একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে রেনু ঋষি তার প্রেমিক আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর হতে দেবীগঞ্জে চিন্তা ঋষির বাড়ীতে এনে কিছুদিন সেখানে অবস্থান করে। ঘটনার বিষয়টি মুকুল চন্দ্র রায় জানতে পেরে রেনু ঋষি ও আল আমিনকে হাতেনাতে ধরার জন্য ভিকটিম চিন্তা ঋষির বাড়ীতে এলে ভিকটিম চিন্তা ঋষি আল আমিন ও রেনু ঋষিকে গোপনে গাজীপুরে পাঠিয়ে দেয়। রেনু ঋষি ও আল আমিনের একসঙ্গে থাকা ও তাদেরকে গোপনে ভাগিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মুকুল চন্দ্র রায় তার শাশুড়ী চিন্তা ঋষিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চিন্তা ঋষি তার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং সে তার মেয়ের কার্যকলাপের প্রতি সমর্থন করে। রেনু ঋষির এহেন কার্যক্রম মুকুল চন্দ্র রায় কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে সে গাজীপুরে রেনু ঋষির কাছে যায় এবং সেখানে আল আমিন নামের ব্যক্তি ও রেনু ঋষির সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মুকুল চন্দ্র রায় রেনু ঋষিকে হুমকি দিয়ে বলে যে, আমি তোকে, আল আমিনকে এবং তোর মা কে খুন করে ফেলব। উক্ত হুমকি ধামকি দিয়ে মুকুল চন্দ্র রায় নীলফামারী জেলার জলঢাকা থানাধীন তার নিজবাড়ীতে চলে আসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত